আমাদের ভূখণ্ডে প্রাচীন সভ্যতা
আড়াই হাজার বছরেরও প্রাচীন আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি । রাজধানী ঢাকার অনতিদূর নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে মিলেছে এমন সব নিদর্শ, যার ভিওিতে লিখতে হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস । প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহা ও গাছের কোটরে বাস করত । মানুষের প্রথম স্থায়ী বসতি গড়ে উঠেছিল ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে । আর ভারতের মেহেরগড়ে মিলেছে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম কৃষিনির্ভর স্থায়ী বসতির নিদর্শন । উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া গেছে মাটিতে গর্ত করে বসবাসের উপযোগী ঘরের চিহ্ন 'গর্ত-বসতি' । এখানকার দুর্গ-নগরের অভ্যন্তরে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের প্রাচীন একটি ঘরের ধসে পড়া মাটির দেয়ালের চিহ্ন পাওয়া গেছে । একমাত্র উয়ারী-বটেশ্বর ছাড়া বাংলাদেশে এ ধরনের মাটির প্রাচীন স্থাপত্যের নির্দশন অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি । শুধু গর্ত-বসতি নয়, উয়ারী-বটেশ্বরে মিলেছে এমন সব নিদর্শন, যা দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে আমাদের সভ্যতা আড়াই হাজার বছরের পুরোনো । উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনাদির মধ্যে রয়েছে : মুল্যবান পাথরের পু্ঁতি, মাটির পাএ, বাটখারা, মুদ্রা, রাস্তা, ইটের কাঠামো, গর্ত-নিবাস প্রভৃতি ।
১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খননকালে একটি পাএে কয়েকটি মুদ্রা পান, যা ছিল বঙ্গ ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা । এখানে আবিষ্কৃত
হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, বন্দর, রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, পাথর ও কাচের পুঁতি, মুদ্রাভান্ডারসহ উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাসস্কিত রৌপ্যমুদ্রা ও আরে অনেককিছু । নেদারল্যান্ডের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর এখানকার দুর্গ-নগর বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে ।
আগুন আবিষ্কারের কাহিনী :
আধুনিক সভ্যতায় আগুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সভ্যতার শুরুতেই মানুষ আবিষ্কার করেছিল আগুন । বলা হয়ে থাকে যে কয়েকটি আবিষ্কার মানুষকে সভ্য মানুষ হিসেবে পরিচিত করেছে তার মধ্যে আগুন অন্যতম । মানব সভ্যতার শুরুর দিকে যখন মানুষ গুহা কিংবা গাছের ডালে বাস করত তখন আগুন ছিল তাদের কাছে খুব ভয়ের বিষয়বস্ত । তারা আগুনকে ভাবত দেবতার রোষের বহিপ্রকাশ । তাই বনে আগুন লাগলে তারা দেবতাকে খুশি করার জন্য নানা কিছু করত । এভাবে শত শত বছর চলে যাওয়ার পর তারা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতিতে কীভাবে আগুন সৃষ্টি হয় । কীভাবে শুকনো ডালে ডালে ঘষা লেগে সৃষ্টি হওয়া স্ফুলিজ্ঞ তৈরি করে বিশাল আগুন । আবার পাথরে পাথরে ঘষা লেগে কীভাবে আগুন সৃষ্টি হয় সেটাও মানুষ আবিষ্কার করেছিল । কিন্তু শুধু আগুন সৃষ্টি করলেই তো হবে না, আগুনের উপর নিয়ন্ত্রণও থাকতে হবে । আগুনের ব্যবহার আয়ও করতে, আগুনকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে মানুষের অনেক বছর সময় লেগেছে ।